দিচ্ছি ভাই, একটু পরেই দিচ্ছি, গাড়িতে আছি – নেমেই দিবো, বাইরে আছি – বাসায় যেয়েই দিবো। আবার উল্টা টাও বলে, যেমন – বাসায় আছি, বাইরে যেয়েই দিবো। এভাবেই বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট (বাংলাদেশী) কাজ শেষে টাকা দিতে গড়িমসি করে, নানা রকম তালবাহানা করে। তবে সবাই না।

আমিও জানি তারাও দিবে, কিনতু এই তালবাহানা কেনো। কিসের এতো ভয়। টাকা দিতে কেনো এতো দেরি করে? এসব নিয়ে ভেবে ভেবে আজ হঠাৎ আমার মন খারাপ। আসেন, দেখি, কিছু মানুষ কেনো এতো কাহিনী করে, কাজ শেষ হলেও পুরা টাকাটা দিতে চায়না বা ঝুলিয়ে রাখতে চায়।

কেনো বাঙালী টাকা দিতে এতো কাহিনী করে?

নাম্বার# ১: তারা ভাবে টাকা দিয়ে দিলেই তো মাল হাতছাড়া হয়ে যাবে। তখন ফোন দিলেও আর ধরবেনা। কোনো কারেকশন লাগলে করে দিবে না।

নাম্বার# ২: অতীতে অন্য কারো কাছে ধরা খেয়ে এসেছে, টাকা দিয়েও ওয়েবসাইট পায়নি বা কাজ ঠিকমতো বুঝে পায়নি, এজন্য আমাকেও সন্দেহ করছে বা ভয় পাচ্ছে।

নাম্বার# ৩: খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ভুল বের করার চেষ্টা করছে কিন্তু পাচ্ছেনা এবং এজন্য মনে মনে আরো রেগে যাচ্ছে। অবচেতন মনে নিজের অজান্তেই পণ করে আছে, ভুল তোর আমি বের করবোই, আগে কারেকশন করে নিবো তারপরে ট্যাকা দিবো।

শুধু কি বাঙালী, বিদেশীরা করে না?

হাঁ করে কিন্তু আমার সাথে না।

কেনো?

কারণ আমি বিদেশীদেরকে সেই সুযোগই দেইনা। কাজের আগে ১০০% টাকা (ডলার) নিয়ে নিই। আগে মাল তারপরে কাজ।

তবে যারা নিয়মিত এবং বছরের পর বছর আমার সাথে কাজ করছে, এবং যাদের সম্পর্কে আমার খুব ভালো ধারণা আছে, তাদের ব্যাপারটা আলাদা।

তাহলে বাংলাদেশী ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে আগে টাকা নিইনা কেন?

কে বলেছে নিইনা? আমি কি আপনাকে একবারও বলেছি যে বাঙলীদের কাছ থেকে আগে টাকা নিইনা?

বাঙালীদের কাছ থেকেও কাজের টাকা আগে নিই কিন্তু পুরো এমাউন্ট নিইনা। এই ধরেন ৩০% থেকে ৫০% আগে নিই আর অবশিষ্ট টাকা কাজ ডেলিভারী দেয়ার পরে নিই। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স টাকা আরো কম নিই। ইভেন কোনো ক্ষেত্রে আমি নিজেই ক্লায়েন্টকে অ্যাডভান্স টাকা দেই। হ্যা, ঠিকই শুনেছেন, আমি নিজেই আমার ক্লায়েন্টকে টাকা দেই।

কিভাবে? কেনো?

এই ধরেন, ক্লায়েন্ট কে আমার টাকা দিয়ে ডোমেইন কিনে দেই। বেশিরভাগ ক্লায়েন্টের ডুয়েল কারেন্সী সাপোর্টেড বা ইউএসডি কার্ড থাকেনা। এজন্য আমি আমার কার্ড দিয়ে কিনে দেই, ক্লায়েন্ট আমাকে পরে বিকাশে দিয়ে দেয়।

আপনি যদি ফ্রীলান্সার বা ডেভেলপার বা প্রোগ্রামার হয়ে থাকেন, বা কোনো কারণে আপনি যদি আমার সাপোর্টার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি হয়তো ভাবছেন যে সবার কাছ থেকেই আমার সম্পূর্ণ টাকা অগ্রীম নেয়া উচিৎ।

হা, আমিও তাই চাই বাট এখানে বিশেষ একটা কারণে আমি তা করিনা, তবে ভবিষ্যতে করবো। আসেন দেখি সেই কারণ টা কি?

বাংলাদেশী কাস্টমারের কাছ থেকে কেনো আমি প্রথমেই সম্পূর্ণ টাকা নিইনা?

কারণ এতেকরে আমার প্রায় ২০% থেকে ৩০% কাস্টমার কমে যাবে। কিন্তু কেন?

আমাদের এই সোনার বাংলা যেমন সুন্দরী, তারচেয়ে বেশী কুৎসিত। এটাই সত্য কিন্তু কেউ বলেনা কারণ বললে চাকরী থাকবে না বা পাবলিক ভোট দিবেনা। আমি যেহেতু চাকরী ছেড়ে দিয়েছি এবং জীবনে কোনোদিন এই অদ্ভুত কিম্ভুতকিমাকার গণতান্ত্রিক দেশের ফালতু রাজনীতি করার ইচ্ছা নাই, তাই শুধু আমিই এটা বলতে পারি।

যাইহোক, মূলকথায় ফিরে আসি। বাংলাদেশে প্রতারকের অভাব নাই। বিকাশ প্রতারক থেকে শুরু করে ব্যাংকখেকো টাইপরা ভুঁড়িওলা – এদেশে ভুরি ভুরি। অন্য দেশেও এধরণের প্রতারকেরা আছে তবে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, নাইজেরিয়া ও আফ্রিকার আরো কিছু দেশে এধরণের প্রতারকদের সংখ্যা অনেক বেশী।

আর সেজন্যই আমি বাঙালী ক্লায়েন্টদেরকে এই ডাউনপেমেন্ট-এর সুযোগটা দেই যাতে করে তারা কিছুটা ভরসা ও স্বস্তি পায়, এবং অল্প কিছু টাকা দিয়েই দ্রুত ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর কাজটা শুরু করতে পারে।

আমার সাথে কাজ শুরুর আগে তারা অনেকেই হয়তো ভাবতে পারে যে এই ছেলেকে যদি সম্পূর্ণ টাকা অগ্রীম দিয়ে দেই আর ও যদি টাকাটা নিয়ে পালিয়ে যায় বা ফোন বন্ধ করে দেয় তাহলে তো আমি শেষ। এইসব ভয় দূর করানোর জন্যই মূলত এই ডাউনপেমেন্ট বা ইনস্টলমেন্ট এর সুযোগ দেয়া। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষ এই সুযোগের অপব্যাবহার করছে।

কিন্তু আমি যদি টাকার জন্য কাউকে একবারের বেশি দুবার ফোন করি তাহলে তিনি ভয়ানক মাইন্ড করবেন। আমি কি আপনার টাকা মেরে খাবো, আমি কি টাকা দিবোনা, টাকার জন্য আর ফোন দিয়েননা, আমি কি গরিব, বা আমি কি ছোটোলোক — আকার ইঙ্গিতে এই ধরণের কথা বলার বা বুঝানোর চেষ্টা করবে। ইভেন আমি এমনো দেখেছি যে কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা করে কিন্তু কাজ শেষে সামান্য কয়েক হাজার বাকি টাকা দিতেও ঝামেলা করে যা কখনোই একজন ভদ্র ভালোমানুষ বা একজন ঈমানদার করবে না ।

টাকা নিয়ে এই কালক্ষেপণ বা গড়িমসি করাতে কার বেশি ক্ষতি?

ক্ষতি আসলে দুপক্ষেরই। লংটার্ম বেসিসে হিসাব করলে ক্লায়েন্টের ক্ষতিটাই বেশী। শর্টটার্মে আমাদের ক্ষতিটাই একটু বেশী।

সবধরণের ক্লায়েন্টকেই আমরা বিভিন্নভাবে মার্কিং করে রাখি। ইভেন, তিন বছর পরে কোনো ক্লায়েন্ট যদি এসে কারেকশন চায় বা নতুন কোনো কাজ করতে চায়, আমরা প্রথমে তার ক্লায়েন্ট-হিস্টোরি বের করে দেখি। আমাদের প্রত্যেক টিম মেম্বার যে যার সাথে কাজ করে তার সম্পর্কে কিছু নোট অবশ্যই রাখে। আর ফাউল কাস্টমারদের ব্যাপারে তো নির্দিষ্ট (প্রিমেড) ট্যাগ থাকে, যেমন এংরি পার্সন, টকেটিভ, ন্যাগার, ইত্যাদি।

ভবিষ্যতে কেউ যদি দ্বিতীয়বার কাজ করতে আসে আর আমরা তার হিস্ট্রি চেক করে তার নামের সাথে যদি এইসব লেবেল বা ট্যাগ পাই, তাহলে আমরা তার সাথে কি করি সেটা না বলে আপনি হলে কি করতেন একবার ভেবে দেখেনতো।

আর যারা আমাদের প্রাপ্য টাকা দিতে কাহিনী করে, আমরা সিম্পলি তার সাথে আর কাজ করিনা।

কেউ কেউ আমার এ কোথায় হয়তো নাক সিঁটকাবে আর মনে মনে ভাববে দেশে কি ডেভেলপার কোম্পানির বা এজেন্সির বা ফ্রীল্যান্সারের অভাব পড়ছে? তাদের প্রতি আমার সিম্পল উত্তর হচ্ছে- আমাদের যদি উচ্চমানের যোগ্যতা থাকে তাহলে ক্লায়েন্টেরও অভাব ইনশাল্লাহ পড়বেনা। আপনি যে পরিমাণ টাকা দিয়ে আমাদের সাথে কাজ করছেন, ওই পরিমান টাকা দিয়ে হয়তো দুজন ডেভেলপারকে হায়ার করতে পারবেন কিন্তু যখন কোনো সত্যিকারের ঝামেলায় পড়বেন তখন ওই দুজনের একজনও আপনাকে হেল্প করতে পারবেনা।