বাংলাদেশে একটা স্টার্টআপ বিজনেস ওয়েবসাইট বানাতে গড়ে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা খরচ পড়ে। ক্লায়েন্ট এর চাহিদার ধরণ অনুযায়ী এই মূল্য আরো কম বা বেশি হতে পারে। এছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যা এই ওয়েবসাইটের খরচকে প্রভাবিত করে যেমন, কি ধরণের টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে, কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ / ফ্রেমওয়ার্ক (যেমন পিএইচপি, নোড জেএস, লারাভেল, রুবি অন রেইলস, এএসপি ডট নেট, কোডইগনাইটার) দিয়ে ব্যাকএন্ড তৈরী হবে, কোনো সিএমএস (কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম – যেমন ওয়ার্ডপ্রেস, ড্রুপাল, জুমলা) ব্যবহার হবে কিনা, ইত্যাদি।

এগুলো ছাড়াও স্থানীয় কিছু বিষয় আছে যেমন একটা ওয়েবসাইট কোন মানের ডেভলপার বা এজেন্সী বানাচ্ছে, তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা, শিক্ষাগত ও কারিগরি যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার বয়স, অতীত কাজের সফলতা বা ব্যার্থতার পরিমান, কাজের মান, ক্লায়েন্টের বাজেট ও আর্থিক অবস্থার মতো বিষয় গুলোও এই মূল্য নির্ধারণে জড়িত।

এই পোষ্টে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, একটা ওয়েবসাইট বানাতে কেমন খরচ হবে, কোন ধরণের ওয়েবসাইট কত দাম, একটা প্রফেশনাল লেভেলের সাইট বানাতে ঠিক কত মূল্য হওয়া উচিত, একই ধরণের দেখতে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন দাম কেনো হয়, একটা ওয়েবসাইট বানাতে কি কি জিনিস লাগে বা কিনতে হয়, মেইনটেন্যান্স খরচ কতো, কি কি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত, ওয়েবসাইট বানানোর পরে কি কি করতে হয়, ডেভেলপার এর কাছ থেকে কি কি ক্রেডেনশিয়াল আপনার দখলে রাখতে হয়, আপনার ওয়েবসাইট যদি নষ্ট হয়ে যায় বা আপনার ডেভেলপার যদি আপনার সাথে ভবিষ্যতে যোগাযোগ না রাখে বা মারা যায় সেক্ষেত্রে আপনি কিভাবে এটাকে চালু রাখবেন বা আপডেট করবেন, ইত্যাদি বিষয়ে আপনাকে সংক্ষেপে পরিষ্কার একটা ধারণা দিবো।

এসব বিষয় জানা থাকলে, একজন ওয়েবসাইট মালিক হিসাবে আপনি কখনো ঠকবেন না, আপনার ওয়েবসাইট কখনো আপনার হাতছাড়া হবে না এবং আপনি সারাজীবন এটাকে সুন্দরভাবে চালু রাখতে পারবেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ও আপনার প্রয়োজনমতো আপডেট ও পরিবর্তন করতে পারবেন করতে পারবেন।

খরচ আসলে ঠিক কত?

সব ওয়েবসাইট যেমন এক নয় তেমনি তার খরচও সমান না। সার্বিক দিক বিবেচনায় বিভিন্ন ধরণের ওয়েবসাইটের জন্য আপনার যে পরিমান খরচ হতে পারে, নিচের টেবিলে (পরবর্তী সেক্শনে) তার একটা বিবরণ দিলাম।

তার আগে যে দুটি জিনিস সবার জন্য প্রযোজ্য তার বিবরণটা আগে দেই তাহলে বিষয়টা বুঝতে সুবিধা হবে। এই দুটি জিনিসের প্রথমটি হচ্ছে ডোমেইন ও আরেকটি হচ্ছে হোস্টিং।

পয়েন্ট ১: ডোমেইন

একটা ডোমেইন সাধারণত ১২ ডলার অর্থাৎ বর্তমান ২০২৫ সালে প্রায় ১৪৬৫ টাকা। তবে আরো কম ও বেশি দামেরও আছে যেমন ২ ডলার থেকে শুরু করে ৬০ ডলার এমনকি মিলিয়ন ডলারেরও ডোমেইন আছে। ডোমেইনের দাম মূলত টিএলডি’র (টপ লেভেল ডোমেইন) উপরে নির্ভর করে। যেমন। xyz ডোমেইনের দাম ১ ডলার বা ১২২ টাকা, org, net, info ১০/১৫ ডলার, com ১২ ডলার বা ১৪৬৪ টাকা, ইত্যাদি। তবে এই প্রাইস বিভিন্ন রেজিস্টার কোম্পানির প্রোমোশনের ধরণ অনুযায়ী অনেক কম বা সামান্য বেশি হতে পারে। আমি যেই প্রাইসগুলো বলেছি তা একবছরের জন্য প্রযোজ্য। আপনি আরো বেশি মেয়াদের জন্য কিনতে পারেন তবে ডোমেইন ১ বছরের কম মেয়াদে কেনা যায়না এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য কিনতে পারবেন। তবে বছরের জন্য কিনে প্রতি বছর রিনিউ করাটা সাশ্রয়ের। রিনিউ প্রাইস ১ম বছরের প্রাইসের চেয়ে দেড়গুণ বেশি যেমন ধরেন ১ম বছর ১২ ডলার হলে ২য় বছরে ১৮ ডলারে রিনিউ হবে।

উপরের কথার সারমর্ম হচ্ছে – ডোমেইন প্রাইস ১২ ডলার বা ১৪৬৪ টাকা

পয়েন্ট ২: হোস্টিং

হোস্টিং প্রাইস ৩০ ডলার বা ৩৬৬০ টাকা থেকে ২৫০ ডলার বা ৩০,৫০০ টাকা এমনকি আরো অনেক বেশি দামের হতে পারে ( বছরের জন্য)। তবে মুটামুটি-ভালো মানের হোস্টিং ২০০ থেকে ২৫০ ডলারের আশেপাশে হবে। আমরা যেহেতু বাঙালি তাই সস্তা একটা হোস্টিং ৫,০০০ টাকা ধরে নিলাম যা বেশিরভাগ মানুষের জন্যই প্রযোজ্য এবং কাজ চালিয়ে নেয়ার মতো। তবে কোনো রিসেলারের কাছ থেকে হোস্টিং নিবেন না। তাহলে পুরো টাকাটাই পানিতে চলে যাবে। আর বাংলাদেশী কোনো কোম্পানির কাছ থেকে তো অবশ্যই না কারণ বাংলাদেশে কোনো ফার্স্ট পার্টি হোস্টিং কোম্পানি নাই – এটাই সত্য। যা আছে সব রিসেলার। — আল্লাহই জানে এই কথা লেখার পরে জানি আবার কি হয়! রিসেলার কোম্পানির সব পোলাপাইন এসে আমার বাড়ি ঘেরাও করে।

ওপরের বক্তব্যের মূলকথা হচ্ছে — হোস্টিং প্রাইস ৫০০০ টাকা।

পয়েন্ট ৩: মূল খরচ (হায়ারিং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সী)

ওয়েবসাইট বানানোর পারিশ্রমিক গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা যেটা আপনার ফ্রীল্যান্সার বা ওয়েব ডিজাইন এজেন্সিকে দিতে হয়। অবশ্য বাংলাদেশে অনেক ওয়েব ডিজাইন এজেন্সী রয়েছে যাদেরকে আপনি এক্সট্রা টাকা দিয়ে দিলে তারা আপনার ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনে দিতে পারবে যেমনটা আমরা দিই। রি-সেলারদের কাছ থেকে না কিনে ফার্স্ট পার্টি কোম্পানি থেকে এগুলো কিনতে হলে আপনার ডুয়েল কারেন্সি কার্ড (USD) লাগবে যা অনেক ক্লায়েন্টেরই থাকে না। সেক্ষেত্রে এই এক্সট্রা সার্ভিসটা কাস্টমারের জন্য অনেক হেল্পফুল।

বাংলাদেশে তৈরী কিছু ওয়েবসাইটের প্রকৃত খরচ

উপরের আলোচনা থেকে আপনি এতক্ষন হয়তো খরচ সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পেয়েছেন। আপনার এই আইডিয়াকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে নিচের টেবিলে কিছু ওয়েবসাইটের লিংক ও তার তৈরির খরচটা দিলাম। এটা আপনাকে আরো ক্লিয়ার আইডিয়া দিবে।

ওয়েবসাইটখরচ (টাকা)
Your Thinking Mind৭,০০০
International Institute For Asian Peace৬,৫০০
গ্রাম বিকাশ সংস্থা১০,০০০
ECPL Bangladesh Ltd.১২,০০০
Hightech Inter Studio Ltd.৯,৩০০
Tailor Bird Sourcing১০,০০০
Q. H. Masood & Co. Ltd.১১,৫০০
উপরের এই টেবিলে প্রত্যেকটি লিংকে ক্লিক করে আপনি ওয়েবসাইটগুলো দেখতে পারবেন।

তো এই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা ওয়েবসাইট বানানোর খরচের আদ্যোপান্ত। কোনো বিষয় যদি আপনার কাছে এখনো ক্লিয়ার না হয় বা আপনার কোনো প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আমি বা আমরা অবশ্যই প্রত্যেকটি ভ্যালিড প্রশ্নের উত্তর দিবো।

আর আপনি যদি আমাদেরকে দিয়ে আপনার ওয়েবসাইট বানাতে চান তাহলে 01947-888197 নম্বরে মোবাইল করতে পারেন।